Monday, July 31, 2017

শারজাহে বাংলা সংগীতসন্ধ্যা




বাংলা গানের দুই কিংবদন্তি হাসন রাজা ও শাহ আবদুল করিমের বিখ্যাত গান নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহে সংগীতসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার শারজাহের একটি হোটেলে আয়োজিত এই সংগীতসন্ধ্যায় সংগীত পরিবেশন করেন প্রবাসী শিল্পী জাবেদ আহম্মদ মাসুম ও ফেরদৌসী নার্গিস শম্পা। কমিউনিটির পক্ষে এ সংগীতসন্ধ্যার আয়োজন করেন হাজি শফিকুল ইসলাম। মিডিয়া পার্টনার ছিল একাত্তর টিভি ও প্রবাসের নিউজ ডটকম।

উৎসব প্রিয় বাঙালি যেকোনো উৎসবেই মেতে ওঠেন। আর তা যদি হয় বাউল গান, সবাই গলা ছাড়েন একসঙ্গে। প্রবাসীরা এভাবেই মেতে উঠেছিলেন প্রাণের সুরে। নারী-পুরুষ, আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকল বয়েসি প্রবাসী ছুটে এসেছিলেন প্রাণের টানে।

মাসুম ও শম্পা হাসন রাজা ও শাহ আবদুল করিমের মৌলিক গান নিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লুৎফুর রহমান ও নৃত্যশিল্পী তিশা সেন। অনুষ্ঠানে নানা মন মাতানো গান প্রবাসীরা উপভোগ করেন। আয়োজকেরা জানান নতুন প্রজন্মকে নিজের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটাতেই এ আয়োজন।
আরব আমিরাতের অন্য অনুষ্ঠানের মতো এই অনুষ্ঠানও শুরু হয় কিছুটা দেরিতে। নানা প্রদেশ থেকে প্রবাসীরা আসতে দেরি হয় বলে এই বিবেচনায় এখানকার অনুষ্ঠান শুরু একটু দেরি করেন আয়োজকেরা। ঘড়ির কাটায় যখন রাত ৯টা ৪৫ মিনিট তখন মঞ্চে আসেন আয়োজক হাজি শফিকুল ইসলাম। তিনি শুভেচ্ছা জ্ঞাপনে মঞ্চে ডাকেন কমিউনিটির নেতৃস্থানীয়দের। তিনি জানান অনুষ্ঠান আয়োজনের নেপথ্য কথা। আরও বলেন, বাংলা গানের দুই কিংবদন্তি হাসন রাজা আর শাহ আবদুল করিমকে প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে এবং বাংলা গানকে ভালোবাসাতে এ আয়োজন।
এরপর মঞ্চে আসেন উপস্থাপিকা তিশা সেন। তিনি ডাকেন সহযোগী উপস্থাপক লুৎফুর রহমানকে। তারা দুজন মিলে শুরু করেন গানের আসর পরিচালনা। তাঁদের আহ্বানে মঞ্চে এলেন কণ্ঠশিল্পী মাসুম ও শম্পা। সঙ্গে কলাকুশলী ছিলেন সানি, তালহা, নূর ও রফিক। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান।

প্রথমে হাসন রাজার তিনটি গান পরিবেশন করেন মাসুম। নেশা লাগিল রে, মাটিরো পিঞ্জিরার মাঝে ও বাউলা কে বানাইলো রে। শুরু হয় দর্শক শ্রোতার উল্লাস। এরপর আসেন শম্পা। তিনি শাহ আবদুল করিমের তিনটি গান—আইলায় না আইলায় না রে বন্ধু, কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু, কোন মেস্তরি নাও বানাইছে..। তাঁর গান পরিবেশনার সময় দর্শকেরাও গলা ছাড়েন সম সুরে। মরুভূমির আকাশ বাতাসে তখন যেন বাংলা গানের বসন্ত বাতাস।
শম্পার গানের পর আবার মঞ্চে আসেন মাসুম। তিনি করেন শাহ করিমের অন্য তিনটি গান। তারপর আবার আসেন শম্পা। তিনি করেন হাসন রাজার অন্য তিনটি গান। এমন করে একেক শিল্পী গান পরিবেশন করেন দুই কিংবদন্তির নয়টি করে গান।

সবশেষে ছিল আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম। এই গানের সময় সবাই একসঙ্গে নেচে ওঠেন। এ যেন প্রাণের সঙ্গে বেঁধেছে যে সুর। সবাই এই গানটি অনেক আনন্দে পরিবেশন করেন। ঘড়ির কাটায় যখন ঠিক ১২টা আরব আমিরাতের আইন অনুযায়ী বন্ধ হয় মাইক। সাঙ্গ হয় মিলনমেলা।

Monday, July 24, 2017

কক্সবাজারে পাহাড় ধসে দুই শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু


কক্সবাজার শহর ও রামুতে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় ১০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজ এলাকা এবং রামু উপজেলার মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চেইন্দা এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

মৃতরা হলেন- মোহাম্মদ শাহেদ (১৮) ও সাদ্দাম হোসেন (২৮)। তাদের বাড়ি কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজ এলাকায়। শিশু সায়মা (৫) ও জিহান (৭) রামুর চেইন্দা এলাকার জিয়াউর রহমানের সন্তান।

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক জানান, রামুর চেইন্দা এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনায় ঘুমন্ত অবস্থায় একই পরিবারের সায়মা ও জিহান নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

মাটিচাপা পড়া অবস্থায় তাদের বাবা জিয়াউর রহমান (৩৫) ও মা আনার কলিকে (২৯) জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

উদ্ধারকৃত দম্পতিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজ এলাকায় অপর পাহাড় ধসের ঘটনায় মোহাম্মদ শাহেদ ও সাদ্দাম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দেলোয়ার হোসেন (২৫) ও আরফাত হোসেন-কে (৩০) আহত  অবস্থায় উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, গত তিনদিন ধরে কক্সবাজার জুড়ে অনবরত বৃষ্টি হচ্ছে। অমানিশার জোয়ার, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি উপকূল সমতল সবখানেই প্লাবিত হচ্ছে।

সোমবার রাত ১০টার পর হতে মুষলধারে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত ভোররাতের দিকে এ পাহাড় ধ্বসের ঘটনার জন্ম দেয়।

কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী, উখিয়া, টেকনাফেও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত আরও ছয়জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের নাম তাৎক্ষণিক জানাতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। পাহাড় ধ্বস এলাকার মাটি সরানোর কাজ দ্রুত চলছে বলে জানান স্থানীয়রা।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, শনিবার থেকে কক্সবাজার জুড়ে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা এবং পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

সম্পর্ক মরে, ভালোবাসা মরে না

কত দিন পরে আমরা দুজন মুখোমুখি।

ম্যাপল পাতার মতো সিঁদুরে লাল হয়ে আছে অমিতের মুখের পাতা। গাছের ব্যাজ থেকে ঝরে পড়ছে কথা। কেমন আছ, কথাময়ী? প্রশ্নটা গাছ হেলানো। কেউ না জানুক অমিত তো জানে স্বভাব আমার উইন্ডসোয়েপ্ট।

তুমুল বাতাসে ডাল লতাপাতাসহ হেলে যাই, ওটাই আমার ইমোশনাল বয়স। কিন্তু ভেঙে পড়ি নাম আর সেটাই আমার ইন্টেলেকচুয়াল বয়স। আমি ঝরে পড়া কথার হলদে পাতাটা নিয়ে উত্তর করি—যেমন চেয়েছ।

কেমন ছিলে? অমিতের দ্বিতীয় প্রশ্ন।

সবুজ রঙের একটা ম্যাপল পাতা ছিঁড়ে বলি, যেমন রেখেছিলে।

কোথায় আছ?

অমিতের তৃতীয় প্রশ্নটা আমাকে মেরে ফেলে প্রতি রাতে। আমি লাল বর্ণের একটা পাতা হাওয়ায় উড়িয়ে বলি, যেখানে তুমি নেই।

ময়ী, চিরকালই তোমার ধারে কাটা স্বভাব। একদম বদলাওনি আমার উইন্ডসোয়েপ্ট।

আমি আমার কৃষ্ণচূড়া রঙের চোখের দৃষ্টি অমিতের চোখের বাগানে সরাসরি রেখে বলি, হুম। আমার বদলে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠেনি; যেমন হয়ে উঠেছিল আমার কাছ থেকে তোমার সরে যাওয়া।

অমিত সাদা শার্টের গলার কাছের বোতামটি খুলে দেয়। গরম লাগছে ওর। খুলতে খুলতেই বলে, আগুনে পড়লেই কেবল মানুষের মরণ হয় এই কথা যেমন সত্য, বরফে পড়লেও হতে পারে, এটাও মিথ্যে নয়। আমি মরছি ময়ী তোমার মুখের কথার শীতল দহনে।
হঠাৎ করে দহনের শিস দিয়ে গেল একটা চির বিরহী পাখি।
আজ এত বাতাস এই ম্যাপল গাছের আঁচলে। আমি কোমর সমান চুলগুলো একঝলকে মুচড়ে ফেলি। তুলে রাখি খোঁপা নামের কারাগারে। ওসব ওর এত পছন্দ ছিল! খোঁপাতে ঘ্যাঁচ করে কাঠি মতন একটা ফলা আটকে রাখতে রাখতে বলি, হাহ! শীতল দহন। তাই কি? লাগছে গায়ে, খুব? অমিত শোনো, প্রেমের আগুনে পড়লে কেউ পুড়ে নিঃশেষ হয়। কেউ ঝলসে ওঠে। কেউ মরে যায়। একদম মরে যায়। কেউ বেঁচে থেকে জানিয়ে দিতে জানে, সম্পর্ক মরে, ভালোবাসা মরে না। সম্পর্কে বিচ্ছেদ হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার ভেতরের যে ভালোবাসাটুক অবশিষ্ট থাকে, তা ব্যবচ্ছেদ করবার সাধ্য তো কারও নেই।
কত দিন পরে আমরা দুজন আবারও একসঙ্গে।
ম্যাপল পাতারা টুপটাপ করে ঝরছে অবিরাম। পাতা ঝরার দৃশ্যের সঙ্গে স্মৃতির নিবিড় একটা সাদৃশ্য আছে। ঝরে পড়া পাতা দেখলেই জীবন থেকে ঝরে পড়া মানুষের কথা মনে পড়ে। আনমনে অতীত স্মৃতিবিধুরতার কোল হতে উছলে পড়ে কিছু কথা।
আমি নাকের ডগা থেকে শিশিরের মতো টলমল করা ঘাম মুছতে মুছতে বলি, অমিত! অমিত মনে আছে তোমার? আমার ঝলসে ওঠা স্বভাবই একদিন আকৃষ্ট করেছিল তোমাকে। বখাটেকে থাপ্পড় দেওয়া একটা বিকেল তখন ঘরে ফিরছিল, রাত্রিকে সময়ের মালিকানা দিয়ে। সেটাই ছিলাম আমি। তোমার উইন্ডসোয়েপ্ট। কীভাবে বদলায় নিজেকে বলো? মরণকে আনতে শুধু শান বসানো ছুরি আর উত্তপ্ত বাক্য লাগবে কেন, অমিত? একদিন তোমার ডিপ ফ্রিজ খুলে দেখ। দেখবে, বরফগুলো তেরছা করে ধরলে সেটা দিয়েও মানুষ হত্যা করা যায়। নরম মাটি যেমন পুড়ে কঠিন ইট হয়। তোমার প্রেমের বিরহ বিষে নীল হয়ে গেছি।
অমিত, তুমি চেয়েছিলে ভালো থাকি আমি। আমাকে প্রাচুর্যের মধ্যে দেখতে হিমাগারে রেখেছিলে আমাদের ভালোবাসা। বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়, শরৎ বাবুর এই মহান উক্তিকেই আলিঙ্গন করেছিলে। কেন অমিত? বোকা তুমি জানলেই না বর্ষার ঢলে যে জল উথলে পড়ে তা তৃষ্ণার জল না হয়ে কাঁদনও হতে পারে। অমিত, রবীন্দ্রনাথ আমার প্রথম প্রেম, দ্বিতীয় তুমি ছিলে।
অমিতের নদীর মতো ভরাট কণ্ঠ। সে জানে কখন আমার গান শুনতে হয়। ছলছল ঢেউয়ে বেজে ওঠে ওর স্বর। অমিত গেয়ে ওঠে, আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়, আমি তার লাগি পথ চেয়ে আছি পথে যে জন ভাসায়...।
আমি কেমন সম্মোহনের সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছি।
অমিতকে বলি, গানটা এখনো আমার প্রিয়। আলো-আঁধারির সন্ধিক্ষণে এই গান শুনে কী ভীষণ কাঁদি। আমার জন্য তোমার কল্পিত সুখে থাকার সেই সোনার পালঙ্কে বসে। জানো অমিত, অনিদ্রা রোগে আক্রান্ত আমি। ইনসমনিয়া! প্রতিরাতে ঘুমের সব চেষ্টায় বিফল হয়ে পত্রিকায় চোখ রাখি। কত কী পড়ি। এইতো সেদিন পড়লাম, ব্রাজিলের এলিস্যানি বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা কিশোরী মেয়েটি প্রেম করছে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার ফ্র্যান্সিনাল্ডো নামের ছেলেটার সঙ্গে। ওরা একে অপরকে চুমু দিতে কি ঝামেলায় না পড়বে ভাব একবার! কোন উচ্চতায় মাপবে তুমি তাঁদের? বাহ্যিক নাকি হৃদয়ের?
আমাকে কথিত সমাজের সুখের কাছে বিসর্জন দিয়ে কোন উচ্চতায় যেতে চেয়েছিলে তুমি? অমিত, আমার না ঘুম হয় না। কেবল মনে হয় অকিঞ্চন খাটেই ঘুমটা বুঝি গাঢ় হয়। শান্তির হয়। তোমার সেই খাটটা কি বিক্রি করে ফেলেছ?
অমিতের সাদা শার্ট ভিজে টুপটুপ। যেন বৃষ্টি উত্তাল। অথচ এই শহরে কত দিন বৃষ্টি হয় না! অমিত উত্তর করে, হুম। খুব সস্তায়। এত গাড় ওর গলার স্বর। বৃষ্টি নেই কোথাও। অথচ বুক ভেঙে যাচ্ছে তুমুল বজ্রপাতে। আমি অমিতের সাদা শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিয়ে বলি, আহারে! সস্তায় কত কী পাওয়া যায় অথচ শান্তি কিনতে পাওয়া যায় না। আমার শুধু মনে হয় ওখানে অনেক ঘুম।

অস্ট্রেলিয়ায় অলৌকিক শিশু

প্রায় সব দম্পতিই স্বপ্ন দেখেন সুন্দর ফুটফুটে একটা শিশুর। ঠিক এমনটাই আশা ছিল অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ভোলা প্যাপাস ও তাঁর স্বামীর। তবে তাঁদের স্বপ্ন যেন একটু তাড়াতাড়িই পৃথিবীর আলো দেখে ফেলে। মাত্র ২৫ সপ্তাহেই জন্ম নেয় ভোলা প্যাপাসের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান দিমিত্রা প্যাপাস। জন্মের সময় প্রায় ৯৫০ গ্রাম ওজন ছিল দিমিত্রার, যা কিনা একহাতের তালুতে সহজেই নেওয়া যায়। গত মে মাসে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের র‍্যান্ডউইক রয়াল হসপিটাল ফর উইমেনে জন্ম হয় ‘অকালজাত শিশু’ দিমিত্রার। গুরুতর শারীরিক জটিল অবস্থা নিয়ে জন্মে এখনো বেঁচে থাকায় দিমিত্রাকে অলৌকিক শিশু বলে আখ্যায়িত করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেকেই।
সিডনির লিভারপুলের একটি হাইস্কুলের শিক্ষিকা ভোলা প্যাপাস অন্যান্য দিনের মতোই শিক্ষাদানে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ রক্তপাত শুরু হলে জরুরি ভিত্তিতে সিডনির বিখ্যাত র‍্যান্ডউইকের রয়াল হসপিটাল ফর উইমেনে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে তাঁকে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানেই দিমিত্রার জন্ম দেন প্যাপাস। ঘটনার বর্ণনায় প্যাপাস বলেন, পুরো ব্যাপারটা ৪৫ মিনিটের মধ্যে ঘটেছে। ডাক্তার ও সমস্ত ধাত্রীরাও একেবারে আশ্চর্য হয়ে গেছেন।
জন্মের পর গত দুই মাস ধরেই দিমিত্রা হাসপাতালটির নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) গভীর পরিচর্যায় রয়েছে। দিমিত্রা অনেকটা অলৌকিকভাবেই এখনো বেঁচে আছে। রয়াল হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহপরিচালক অধ্যাপক কেই লুই দিমিত্রার ঘটনার ব্যাখ্যায় বলেন, প্রতি বছর প্রায় ৬০০-র মতো অকালজাত শিশুর জন্ম হয় এই হাসপাতালে। তবে এদের বেশির ভাগই দুই থেকে তিন মাস বেঁচে থাকে। ২৩ সপ্তাহ বয়সী শিশুর জন্মের ঘটনাও রয়েছে যাদের ওজন ছিল মাত্র ৪০০ গ্রামের মতো। তবে এদের ৫০ ভাগ সম্ভাবনা থাকে বেঁচে থাকার। ২৫ সপ্তাহ বয়সী দিমিত্রার শারীরিক অবস্থা ছিল খুবই গুরুতর শঙ্কাজনক। এমন শারীরিক অবস্থায় পাঁচ শতাংশ বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে নবজাতকের। দিমিত্রাকে এনআইসিইউতে একটি ভেন্টিলেটর ও রক্ত সঞ্চালক ইনকিউবেটরে রাখার এক সপ্তাহের মধ্যেই তার ওজন বেড়ে আড়াই কেজিতে দাঁড়ায় বলে জানান কেই লুই।

Sunday, July 23, 2017

দিস ইজ দা লাভলী ম্যান নিকোলাস জেমস ভুজিসিক


১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবর্ন শহরে দুই হাত ও দুই পা বিহীন জন্ম নেওয়া শিশুটির নাম ছিলো নিকোলাস ভুজিসিক। তার মা তাকে ১০ মাস গর্ভে রেখেছিলো জন্মের পর এমন শারীরীক অবস্থা দেখে সেই মাও তাকে বাড়িতে নিতে অস্বীকার করে, তবে পরক্ষনে তার বাবার অনুরোধে তাকে নিয়ে যেতে রাজি হন তার মা। আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠে ভুজিসিক, কিন্তু তার এই শারীরীক প্রতিবন্ধকতার জন্য চারপাশের মানুষের কাছে অনেকটাই উপহাসের বিষয় ছিলেন তিনি। কিন্তু তার বাবা তাকে বলতেন, "তুমি বিধাতার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য উপহার, শুধুমাত্র একটু ভিন্ন মোড়কে"। তুমি হতাশ হয়ো না ভুজিসিক। ওই যে শুরু হলো তার পথচলা আর থামতে হয়নি তাকে। নিজের উপর পূর্ন বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চললেন তিনি___
®®®
তিনি স্নাতক করেছেন দুইটি বিষয়ের উপর "অ্যাকাউন্টিং" এবং "ফাইন্যান্সিয়াল প্লানিং" যা হয়তো আমাদের মতো সাধারন সয়ং সম্পন্ন মানুষের পক্ষেও সহজ নয়। বর্তমানে তিনি সারা বিশ্বে পরিচিত মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে। তার বক্তৃতা শুনে হাজার হাজার মানুষ নিজেকে মোটিভেট করছে। তবে তিনি সবসময় ভাবতেন, হয়তো তিনি কখনো বিয়ে করতে পারবেন না, কারন তার এই অঙ্গহীনতার জন্য হয়তো কোন নারী তাকে পছন্দ করবে না, বা, বিয়ে করবে না। কিন্তু তার সেই ধারনা ২০০৮ সালে ভুল প্রমান করে দিয়েছিলো এক রমনী। জাপানী বংশউদ্ভুত আমেরিকান ওই নারীর নাম ছিলো "ক্যানা মিহারা"। ক্যানা বলেন, "আমি যখন ওকে প্রথম দেখলাম তখন আমার মনে হয়েছিলো আমি যা চাই ওর ভিতরে তার সবই আছে। তারপর আমাদের চেনা জানা শুরু হয় এবং আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করে বিয়ে করি। একবার সাংবাদিকরা ক্যানা কে জিজ্ঞাসা করেছিলো - যদি আপনার সন্তানও ভুজিসিক এর মতো হয় তবে..... উত্তরে তিনি বলেছিলেন- তাহলে আমিও আরেকটা ভুজিসিক এর জন্ম দিবো......
®®
এবার আসি মূল বিষয়ে ---
এই পৃথিবীতে আমরা অনেকেই হয়তো পাওয়া না পাওয়ার অনেক হিসাব করি। আমরা ভাবি আমরা এটা পাইনি, ওটা পাইনি, এমনকি এর জন্য সৃষ্টিকর্তা কে দোষারোপ করতেও বিন্দুমাত্র দেরি হয় না আমাদের। সত্যি বলতে সেই হিসেবে কিন্তু এই ভুজিসিক অনেক কিছুই পায় নি, কিন্তু তারপরেও সে থেমে নেই, নেই কোন আফসোস। হয়তো না পাওয়ার বেদনা তাকে কখন ও, স্পর্শও করতে পারেনি। আর এই যে ক্যানা মিহিরা.... ওনাকে আমরা কিভাবে চিন্তা করবো.... কিভাবে দেখবো ওদের সম্পর্কটা কে..? এমন একটা মানুষের কাছে নির্দিধায় কত সুখের সংসার করে যাচ্ছে সে। এই মেয়েটাও হয়তো কখনও ভাবেনা যে, সে কি পেলোনা... বরং সে কি পাচ্ছে সেটাই হয়তো তার কাছে মুখ্য বিষয়। আসলে সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সব কিছু দেয় না। কিন্তু তাই বলে আমরা যদি আমাদের না পাওয়া জিনিস গুলো নিয়ে সবসময় আফসোস করি, দুশ্চিন্তা করি, তবে দেখবেন জীবনটা বড় বিষাদময় হয়ে উঠবে এবং এর ফলে আপনি আপনার জীবনকে কখনোই উপভোগ করতে পারবেন না। না পাওয়ার শূন্যতা সবসময় আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াবে। শুধু প্রয়োজন একটু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।


সৌদি আরব : সুইপারের চেয়ে ভিক্ষুকের আয় বেশি


সৌদি আরবে রয়েছেন প্রচুর ধনী ব্যক্তি। আবার সেই দেশেই রাস্তায় দেখা যায় ভিক্ষুক।
আরব নিউজ পত্রিকার খবর অনুযায়ী জেদ্দার স্ট্রিট সুইপার বা সড়ক পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিনে এগার ঘণ্টা কাজ করেন, তাও করতে হয় সপ্তাহে ছয় দিন। তবে সে তুলনায় আয় অনেক কম। তাদের এক মাসের আয় মাত্র ৪০০ রিয়াল বা ১০৭ ডলার।
সুইপারদের অনেকেই নির্ভর করেন বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পাওয়া বখশিশের ওপর। অবশ্য সেটি একেবারেই কম নয়, মাসে সাতশ থেকে আড়াই হাজার রিয়াল পর্যন্ত।
এত কষ্ট করে এতো কম আয় করা ইউনিফর্মধারী পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পাশেই দেখা মেলে ভিক্ষুকদের । 
বিশেষ করে রিয়াদ ও জেদ্দার সড়কে দেখা মেলে এসব ভিক্ষুকের এবং তাদের আয়ও খুব একটা কম নয়, কারণ দেশটিতে দান খয়রাতের একটি প্রথা চালু রয়েছে।
সৌদির ভিক্ষুকদের অনেকে আয়ের নতুন পথ খুঁজে পেয়েছে। আর তা হলো, তারা এখন পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করছেন এবং তার বিনিময়ে পাচ্ছেন অর্থ। তবে কর্তৃপক্ষের চোখে তারা ঠিক বৈধ নয় আর এর মধ্যে অনেকেই অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশী বলেই মনে করেন অনেকে।
এরা অনেকে সড়কে সিগন্যালের কাছে থাকে এবং যানবাহন দাঁড়ালে সেগুলো পরিষ্কার করেআর বিনিময়ে বখশিস নেয়। অনেকেই আবার সেটি করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ইউনিফর্ম পড়েই, কর্তৃপক্ষের চোখে যা বৈধ নয়।
দেশটির সত্যিকার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা চাইছেন অতিরিক্ত অর্থ বা টিপস তাদেরকেই দেয়া হোক।
এ বিষয়ে মোহাম্মেদ নামক একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী আরব নিউজকে বলেন, "পয়সা দিতে হলে সেটি সত্যিকার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদেরকেই দিন"।

এইচএসসিতে বিদেশি কেন্দ্র পাসের হার ৯৪ দশমিক ২১



চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় দেশের বাইরের সাতটি কেন্দ্র থেকে ২৫৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২৪৪ জন পাস করেছে। পাসের হার ৯৪ দশমিক ২১ শতাংশ। তাদের মধ্যে ৪৬ জন জিপিএ -৫ পেয়েছে।
 
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনের এই ফলাফল প্রকাশ করেন।
 
কাতারের দোহায় অবস্থিত বাংলাদেশ মাসহুর উল-হক মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৬৮ জন, আবুধাবির শেখ খলিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২৪ জন, বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ১৬ জন, সউদী আরবের জেদ্দা ও রিয়াদ অবস্থিত বাংলাদেশ ইনটারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে যথাক্রমে ৬৫ ও ৬১ জন, বাংলাদেশ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৪ জন এবং ত্রিপলির বাংলাদেশ কমিউনিটি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৬ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। বাসস

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও প্যারিসের মেয়রের সঙ্গে প্রফেসর ইউনূসের বৈঠক



ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরোঁ, প্যারিসের মেয়র অ্যান হিদালগো ও নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৪ সালের অলিম্পিক গেমস আয়োজনে প্যারিসের প্রার্থিতার প্রেক্ষিতে এই গেমস আয়োজনে প্যারিসের প্রস্তুতি বিষয়ে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ ও কমিটিকে ব্রিফ করার উদ্দেশ্যে ১০ জুলাই ২০১৭ সুইজারল্যান্ডে এসেছেন। 
 
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের পূর্বে প্রেসিডেন্ট মাকরোঁ তার হোটেলে প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। প্রফেসর ইউনূস তারুণ্য ও প্রযুক্তির শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সামাজিক ব্যবসা কীভাবে তিন শূন্যর লক্ষ্য (শূন্য দারিদ্র, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নিট কার্বন নিঃস্বরণ) অর্জন করতে পারে প্রেসিডেন্টের নিকট তা ব্যাখ্যা করেন। অল্প কিছু লোকের হাতে পৃথিবীর সম্পদের ক্রমাগত কেন্দ্রীকরণ সমাজে যে ক্ষোভ ও বিশৃংখলার পরিবেশ সৃষ্টি করছে-সে বিষয়ের ওপর তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, যুব সমাজের মধ্যে বর্তমানে বিদ্যমান ব্যাপক বেকারত্ব উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে দূর করা সম্ভব।
প্রেসিডেন্ট মাকরোঁ প্যারিস নগরীর সম্মানসূচক নাগরিকত্ব গ্রহণ করার জন্য প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানান। তিনি ইউনূস সেন্টার প্যারিসের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সব সময় অবহিত থাকারও আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্যারিসের অলিম্পিক আয়োজন কমিটিকে অলিম্পিক ২০২৪ এর পরিকল্পনায় ব্যাপকভাবে সামাজিক লক্ষ্য অর্জনের মাত্রা যোগ করার উদ্দেশ্যে ক্রমাগত পরামর্শ প্রদানের জন্য তিনি প্রফেসর ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান।
 
প্রফেসর ইউনূস এ বছরের ৬-৭ নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠেয় ৮ম বিশ্ব সামাজিক ব্যবসা শীর্ষ সম্মেলন বক্তৃতা দেবার জন্য প্রেসিডেন্ট মাকরোঁকে আমন্ত্রণ জানান। 
 
ওই দিনই প্রেসিডেন্ট মাকরোঁ, প্যারিসের মেয়র অ্যান হিদালগো, প্রফেসর ইউনূস এবং প্যারিস প্রতিযোগিতা কমিটির সদস্যরা ২০২৪ অলিম্পিক গেম্স আয়োজনে প্যারিসের প্রস্তুতির বিশেষ বিশেষ দিকগুলো তুলে ধরতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সকল সদস্যর উদ্দেশ্যে তাদের বক্তব্য রাখেন।
 
তার বক্তব্যে প্রফেসর ইউনূস অলিম্পিক গেম্সের মতো ক্রীড়া ও অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতাগুলো কীভাবে সমাজ পরিবর্তনের শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে তা ব্যাখ্যা করেন।

হেলসিংকিতে বাংলা নামে সড়ক

















বেঙ্গলিন পলকু বা বাংলা পথ
বেঙ্গলিন পলকু বা বাংলা পথ নামে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে একটি সড়ক আছে। প্রথমবারের মতো এ কথা শোনার পর নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। তবে তা আবিষ্কারের পেছনে একটা ইতিহাস আছে। কিছুদিন আগে আমার ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি বা বাংলা নামে সড়ক রয়েছে। ফিনল্যান্ডে আছে কিনা জানি না। এই স্ট্যাটাস দেওয়ার পর শাহদীন কুদ্দুস নামে একজন বাংলাদেশি ভাই জানালেন, বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে রাজধানী হেলসিংকিতে রয়েছে একটি পথের নাম। ফিনিশ ভাষায় নাম বেঙ্গলিন পলকু। যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় বাংলা পথ।

কথা প্রসঙ্গে শাহদীন কুদ্দুস আরও জানালেন, বেঙ্গলিন পলকু নামে এই পথটি হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পুলা ক্যাম্পাসের কাছে ইন্ডিয়ানকাতুর পাশ দিয়ে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। তারপরও মনে মনে ভাবলাম থাকতেও পারে। আমাদের দেশে যদি বিভিন্ন দেশের বা ব্যক্তির নামে সড়কের নাম থাকতে পারে তবে ফিনল্যান্ডে বাংলাদেশ নামে কিছু থাকতে পারবে না কেন। পরে গুগল সার্চ করে নিশ্চিত হলাম এই নামে একটি সড়ক রয়েছে।
বাল্টিককন্যা খ্যাত হাজার হ্রদ আর পাথুরে পাহাড়-পর্বতে ঘেরা ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির আয়তন ১৮৪ দশমিক ৫ বর্গমাইল। জনসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। ১৫৫০ সালে এই হেলসিংকি শহরের গোড়াপত্তন হয় সুইডিশ সাম্রাজ্যের যুগে। ১৮১২ সালে রুশ সম্রাট আলেক্সান্ডার ১-এর সময় ফিনল্যান্ডের রাজধানী তুর্কু থেকে হেলসিংকিতে স্থানান্তরিত হয়। যার মূলকেন্দ্র সিনেটস স্কয়ার। যতটুকু জানা যায়, এর আদি নাম ছিল ভিরোনিয়েমি। পুরো শহর জুড়ে রয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সুইডিশ আর রুশ স্থাপত্যের নিদর্শন। কিছু কিছু সবুজ মাঠও আছে। ছোট ছোট দ্বীপ আর হ্রদের সমন্বয় আর পাহাড়ে সবুজ বৃক্ষরাজি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
যা হোক, অসমর্থিত সূত্রে বেঙ্গলিন পলকু সম্পর্কে যতটুকু জানা গেল তা হলো, ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের প্রতি ফিনিশদের সমর্থন আর বাংলাদেশিদের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে ওই পথের ও এলাকার নামকরণ করা হয়েছে। ফিনল্যান্ডে বাংলা নামের এই পথ একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের জন্য আনন্দের ও গর্বের।

একবার বিদায় দে মা!

সারাটা দিন বিজাতীয় ভাষায় লেকচার দিতে দিতে ক্লান্তি এসে ছেয়ে যায়—শরীরে ও মনে। ক্লাস শেষে 
মনে হয় কারও সঙ্গে খাঁটি বাংলায় কথা বলি। প্রাণের কথা। যখন মা ছিলেন, ক্লাস শেষে আমার অফিসে এসেই মাকে ফোন করতাম। মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হতো। কত যে কথা! এখন আর ফোন করা হয় না। বুকের জমানো কষ্ট-অভিমান বুকেই রয়ে যায়। এখন আর আমি মায়ের কথা, মায়ের গলা শুনতে পাই না। আমি নিজেই সারাক্ষণ মায়ের সঙ্গে কথা বলি। সুখের কথা, দুঃখের কথা, কষ্টের কথা, জমানো অভিমানের কথা।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশের একটি প্রথম সারির অত্যন্ত জনপ্রিয় দৈনিকে একটা লেখা পাঠিয়েছিলাম। পাঠানোর কয়েক দিন পর দুরুদুরু বুকে পত্রিকার সম্পাদক সাহেবকে ফোন করলাম। শুধু জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই আমার লেখাটা কি খুব বেশি বাজে হয়েছে? সম্পাদক সাহেব উত্তরে বললেন, ‘কী বলছেন আপনি? ভাই, আপনার লেখাটা অসাধারণ হয়েছে। আপনার লেখা পড়ে আমি কেঁদে ফেলেছি।’ সম্পাদক সাহেবের কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এল। বাসায় কেউ ছিল না। আমার স্টাডি রুমেই আমার মায়ের ছবিটি। সেটি কাছে নিয়ে শার্টের হাতা দিয়ে ফ্রেমের ওপরের কাচটি বারবার মুছি, মুছতেই থাকি। মাকে বলি, শুনেছ মা, দেশের একজন নাম করা সম্পাদক তোমার ছেলেকে কী বলল। তুমি নেই, এত আনন্দ আমি কার সঙ্গে শেয়ার করব, মা।
যখন মা বেঁচে ছিলেন বাংলাদেশে যাওয়া হতো, মাকে দেখার জন্য। দেশে যাওয়ার চার-পাঁচ মাস আগেই প্লেনের টিকিট কেটে যাওয়ার দিন-তারিখ মাকে জানিয়ে দিতাম। শুরু হয়ে যেত মায়ের দিন গণনার পালা। দেশ থেকে বিদায়ের দিন ঘনিয়ে আসে, মা-আমি কেউ দিনটির কথা উচ্চারণ করি না। সাধারণত বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসার ফ্লাইট সন্ধ্যায় অথবা রাতে থাকে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে ট্রাভেল করলে সিঙ্গাপুরে স্বল্পবিরতির পর মেলবোর্নের কানেকটিং ফ্লাইট ধরতে হয়। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসে কুয়ালালামপুরে সংক্ষিপ্ত বিরতি। সিঙ্গাপুর অথবা কুয়ালালামপুরে মেলবোর্নগামী কানেকটিং ফ্লাইটটাতে উঠেই তো ভেতরটা চুপসে যায়। যাত্রীরা বেশির ভাগই সাদা চামড়া। কারও কানে মুলার সাইজের দুল, কারও বা জিভের ফুটো দিয়ে বেরিয়ে এসেছে হাতুড়ির মতো দেখতে পিতল বা সোনালি রঙের দুই মাথাওয়ালা রড। কারও দুই কানের লতিসহ অর্ধেকটাই নেই। চুলগুলো সব শজারুর কাটার মতো সোজা করে রংধনুর সাতটি রংই ব্যবহার করেছে। চারদিকে তাকিয়ে বুকছেড়া দীর্ঘশ্বাস যেন বলে ওঠে, এ আমি কোথায় যাচ্ছি! এই মানুষেরা যে দেশে বাস করে, সে দেশ কী কখনো আমার মনে হওয়া সম্ভব।
                           টাঙ্গুয়ার হাওর। গত শরৎকালে তোলা ছবি। ছবি: মোহাম্মদ আবদুল বাতেন বিদায়ের দিন সকাল থেকেই আমি আর মা এক খাটে শুয়ে। গল্প আসে না, কথা বলি প্রাণহীন কথা। যাওয়ার সময় হয়ে আসে। সময় মতো বের হতে না পারলে ট্রাফিক জ্যামে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা। মা বলেন, রেডি হও, বাবা। ধীরেসুস্থে জামা-প্যান্ট পাল্টাই। হাত-পা কেমন ভারী ভারী লাগে। জুতা জোড়া পরতে গিয়ে মনে হয়, আমি কী এত ভারী জুতা পায়ে দিয়ে এসেছিলাম। মায়ের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে নিচু হয়ে মার পা ছুঁয়ে সালাম করে, মায়ের কাঁধের ওপর দিয়ে অন্যদের দিকে তাকিয়ে বলি, যাই, মা। মা বলেন, যাই না বাবা, বল আসি! আমার ‘আসি মা’ বলা হয় না। কোনো শব্দই গলা দিয়ে বের করা হয় না। মা বুকে জড়িয়ে ধরেন। আমার মা, আমার বুকের ভেতর দুর্বল শরীর নিয়ে কাঁপতে থাকেন। আমার অগোচরে কয়দিন ধরেই চুপি চুপি অনেক কেঁদেছেন, আর কান্নার শক্তি অবশিষ্ট নেই। আমার সামনে মা কাঁদবেন না। বিদায়বেলায় জননীর অশ্রুতে যদি সন্তানের কোনো অমঙ্গল হয়! স্যুটকেস ব্যাগ সব গাড়িতে উঠে গেছে। গাড়ির ভেতর বড়ভাই অপেক্ষা করছেন। নিচে গাড়ির কাছে এসে ওপরে তাকিয়ে দেখি। বারান্দার গ্রিল দুই হাতে শক্ত করে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছেন মা। অপলক, স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন মা। যত দুর, যতক্ষণ গাড়িটি দেখা যায়। প্লেনে বসে রাতের অন্ধকারে জানালা দিয়ে আলো ঝলমল এয়ারপোর্ট আর রানওয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। ঝাপসা চোখের দৃষ্টিতে একটি দৃশ্যই বারবার ভেসে ওঠে। বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা কাপড় পরা স্থির একটি মূর্তি। আমার জন্মদাত্রী, আমার মা।
রানওয়ে দিয়ে দৌড়ে বিশাল বাহনটি অবলীলায় শূন্যে উঠে যায়। ধোঁয়ার চাদরে ঢাকা উজ্জ্বল আলোগুলো অস্পষ্ট হতে থাকে। আমার মা একসময় অত্যন্ত রূপবতী ছিলেন। সব সন্তানের কাছেই তো তার জননী সবচেয়ে রূপবতী নারী। অসুস্থতার কারণে জননীর কপালের চামড়া কুঁচকে গেছে, মাথার চুল পাতলা হয়ে গেছে। দুই চোখের নিচে কালশিটে পড়ে গেছে। তবুও কী অপরূপ আমার মায়ের চেহারা। হোক না ধোঁয়ার চাদরে ঢাকা, আবর্জনাময় শহর। হোক না ধুলা আর বালিতে মাখামাখি পরিবেশ। তবুও এটাইতো আমার জন্মভূমি। কী অপরূপ জন্মভূমি! প্লেন উঠে যায়, মেঘ ফুঁড়ে, অনন্ত সীমাহীন নীলিমায়। মেঘের ভেলায় ভিজে যায় বাহনটি। ভিজে যায় জননীর, জন্মভূমির অশ্রুতে। নিঃশব্দ আর্তচিৎকারে, বুকের পাঁজর ছিঁড়ে কেঁদে কেঁদে কয়, আমার জননী, জনয়িত্রী, আমার জন্মভূমি, যাস নে বাবা, আমাকে ছেড়ে!

Saturday, July 22, 2017

গ্রিনকার্ড জব্দ করে বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল আমেরিকা


গ্রিনকার্ড জব্দ করে তাহের আহমেদ চৌধুরী (৫৬) নামের এক বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে আমেরিকার অভিবাসন দপ্তর। গ্রিনকার্ডের শর্ত না মানায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।  
২০১০ সালে আমেরিকার নাগরিক বোনের সূত্রে তাহের গ্রিনকার্ড পান। প্রতি বছরই একবার করে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১০/১২ দিন অবস্থান করে গ্রিনকার্ড টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির কারণে এবার তা সম্ভব হলো না।  
তাহের জানান, আমেরিকার লাসভেগাসের সিসকো লাইনের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের চিঠি ছিল। সে অনুযায়ী গত ২০ জুন লসএঞ্জেলেস বিমানবন্দরে নামি। সেখানে অভিবাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারা আমার গ্রিনকার্ড ভালো করে পরখ করার পর জানান, আমি সারা বছরই বাংলাদেশে থাকি। তাই গ্রিনকার্ডের প্রয়োজন নেই। তারা আমার গ্রিনকার্ড ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট আটক করে একটি নোটিশ হাতে দেন। নোটিশ অনুযায়ী আমাকে এক বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাটাতে হবে। এরপরই গ্রিনকার্ড ও পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু আমাকে দু’সপ্তাহের মধ্যেই ঢাকায় ফিরতে হবে। চাকরিতে যোগদান করা জরুরি। এর জবাবে কর্মকর্তারা আমাকে বলেন যে, ঢাকায় ফিরতে হলে গ্রিনকার্ড সারেন্ডার করতে হবে এবং এজন্যে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতার জন্যে অভিবাসন বিষয়ক এটর্নির সহায়তা নিতে হবে।
বাংলাদেশের সন্দ্বীপের সন্তান তাহের আহমেদ চৌধুরী তথ্য প্রযুক্তিতে মাস্টার্স করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাংলাদেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকে তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

চীনা নারীকে ধর্ষণ: সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশির জেল



প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে সিঙ্গাপুরে আসা এক চীনা নারীকে ধর্ষণের দায়ে আনোয়ার হোসেন (৩২) নামের এক বাংলাদেশিকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৯ বার বেত্রাঘাতেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে।  
সিঙ্গাপুুরের 'চ্যানেল নিউজ এশিয়া'র খবরে বলা হয়েছে, আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়ায় বুধবার বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিককে এই সাজা দেয়া সিঙ্গাপুরের হাইকোর্ট।
খবরে বলা হয়, ৪৪ বছর বয়সী ওই চীনা নারী তার প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সিঙ্গাপুরের গেইলাংয়ে যান। পাশের বাড়িতে থাকতেন আনোয়ার।
২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারির ঘটনা। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে আনোয়ার একটি টুথব্রাশ হাতে নিয়ে তার ওই প্রতিবেশীর দরজায় নক করেন। ওই নারীর স্বামী তখন বাসায় ছিলেন না। আনোয়ার টুথপেস্ট চাইলে ওই নারী টুথপেস্ট আনতে ওয়াশরুমে যান। এই ফাঁকে আনোয়ার ঘরে প্রবেশ করে দরজা আটকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

গরুর মাংসের পর এবার মাছ খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা



ভারতে গরুর মাংস খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার পর এবার মাছ নিয়ে ফতোয়া জারি করেছে ভারতের ‘সারা ভারত মৎস রক্ষা কমিটি’ নামের একটি সংগঠন।
জানা গেছে, গরুর পর এবার হিন্দু ধর্মালম্বীদের ঈশ্বরের আসনে বসতে চলেছে ‘মাছ’।
মৎস রক্ষকদের মতে, মাছ হল ভগবান বিষ্ণুর একটি অবতার। অর্থাৎ তাদের মতে মাছ খাওয়া আর ঈশ্বরকে খাওয়া সমান।
এবেলার খবরে বলা হয়েছে, এই সংগঠনেরই এরকম একটি পোস্ট দেশটির সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু গরুর মতো মাছ খাওয়াকে কেন্দ্র করে সারা ভারতে নরহত্যার মতো ঘটনা ঘটে কি না তাই এবার দেখার বিষয়।

মালয়েশিয়ায় পাচারকারীদের হাত থেকে ১৪ বাংলাদেশি উদ্ধার


মালয়েশিয়ায় পাচারকারী চক্রের হাত থেকে ১৪ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় স্পেশাল অপারেশন্স ইন্টিলিজেন্স বিভাগের একটি দল কুয়ালালামপুরের আমপাং এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে উদ্ধার করে। ওই সময় পাচার চক্রের তিন দালালকে গ্রেফতার করা হয়। দ্য মালয় মেইল এবং স্টার অনলাইনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সিরি মুস্তাফার আলি জানান, মানব পাচারকারী তিন বাংলাদেশি এজেন্ট কয়েকজনকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে এসে একটি বাড়িতে আটকে রেখেছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।
তিনি আরও বলেন, অভিযানে ২০টি মোবাইল ফোন এবং পাচারকারীদের কাছ থেকে ২৮ হাজার পাঁচশ রিঙ্গিত পাওয়া গেছে। উদ্ধারকৃত ১৪ জনকে দু’টি কক্ষে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছিল। অভিযানের সময় ওই দু’টি ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছেন।
অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে পাচারকারীরা ওই ১৪ জনকে আটকে রাখা হয়েছিল। দাতুক সিরি বলেন, আমাদের বিশ্বাস গত বছরের ডিসেম্বরে যে মানবপাচারকারী চক্রটিকে তারা আটক করেছিলেন সেই চক্রের সঙ্গে এদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এভাবে অভিযান চালিয়ে মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত আরো সদস্যদের আটক করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সৌদি মরুভূমিতে বাংলাদেশিদের সবজি চাষ



মরুভূমির ধুলাবালির মাঝে গড়ে উঠছে কৃষিখামার। এমন কৃষি-খামারে সবজি ফলাচ্ছেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তা আব্দুল মতলব ও তার ১৭ জন সহযোগী। তাদের হাত ধরে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা।
মদিনা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিলমাসিহ নামক স্থানে মরুভূমির মাঝে একটি কৃষিখামার গড়ে তুলেছেন তারা। একে আরবি ভাষায় বলে ‘মাজরা’। ১৮০ বিঘা জমির এই কৃষিখামার ইজারা নিয়েছেন বাংলাদেশি চট্টগ্রাম সাতকানিয়া মির্জাখিল কুতুবপাড়ার ফজলুর রহমানের ছেলে আব্দুল মতলব।
তিনি জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি খামারটি চালাচ্ছেন। মাসিক ভাড়া ছিল ১০ থেকে ১২ হাজার রিয়াল। বছরে বছরে বেড়ে এখন তা হয়েছে ১৫ হাজার রিয়াল।
চারদিকে ধু ধু মরুভূমি। এর মাঝে এই খামারটি চলছে মূলত জেনারেটর ও গভীর নলকূপের সহায়তায়। বর্তমানে তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কখনও কখনও তা ৪৫-৫০ ছাড়িয়ে যায়।
খামারটিতে মূলত করলা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, শিম, মরিচ, শিমলা মরিচ, কচু, ধনেপাতা ও নানান রকম শাক উৎপন্ন হয়। এছাড়া কিছু আম গাছ রয়েছে, যেগুলোতে প্রচুর আম হয়। রয়েছে ২০টি মুরগি ও দুটি হাঁস।
মতলব আরও জানান, এখানে ফসল উৎপাদন ভালো হয়। তবে বীজ উৎপাদন সম্ভব হয় না। বীজ আনতে হয় বাইরের দেশ থেকে। প্রতি কেজি বীজ আনতে বাংলাদেশি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়।
বর্তমানে এই কৃষি খামারে ১৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা সবাই বাংলাদেশি। তারা শ্রমিক হিসেবে মাসিক বেতনে কাজ করেন । চাষিরা জমি তৈরি করা থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মরত চাষিরা জানান, গড়ে তাদের মাসিক আয় থাকে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার রিয়াল। উদ্যোক্তা পান বার্ষিক ৫০-৬০ হাজার রিয়াল। এর থেকে ভাড়া, বীজ, সার, জ্বালানি ও যন্ত্রপাতির খরচ বাদ দিয়েও লাভ থাকে। মোটের ওপর উদ্যোক্তা ও চাষিরা দেহের শ্রমে-ঘামে যা আয় করছেন, তাতে তারা 


খামারটিতে মূলত করলা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, শিম, মরিচ, শিমলা মরিচ, কচু, ধনেপাতা ও নানান রকম শাক উৎপন্ন হয়। এছাড়া কিছু আম গাছ রয়েছে, যেগুলোতে প্রচুর আম হয়। রয়েছে ২০টি মুরগি ও দুটি হাঁস।
মতলব আরও জানান, এখানে ফসল উৎপাদন ভালো হয়। তবে বীজ উৎপাদন সম্ভব হয় না। বীজ আনতে হয় বাইরের দেশ থেকে। প্রতি কেজি বীজ আনতে বাংলাদেশি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়।
বর্তমানে এই কৃষি খামারে ১৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা সবাই বাংলাদেশি। তারা শ্রমিক হিসেবে মাসিক বেতনে কাজ করেন । চাষিরা জমি তৈরি করা থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মরত চাষিরা জানান, গড়ে তাদের মাসিক আয় থাকে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার রিয়াল। উদ্যোক্তা পান বার্ষিক ৫০-৬০ হাজার রিয়াল। এর থেকে ভাড়া, বীজ, সার, জ্বালানি ও যন্ত্রপাতির খরচ বাদ দিয়েও লাভ থাকে। মোটের ওপর উদ্যোক্তা ও চাষিরা দেহের শ্রমে-ঘামে যা আয় করছেন, তাতে তারা সন্তুষ্ট।

কষ্টের মধ্যে মরুভূমির খরতাপ, রাতের নিঃসঙ্গতা আর মশার জ্বালা। বেওয়ারিশ জংলি কুকুর আর সাপের ভয়ও আছে কিছুটা। অবশ্য ইন্টারনেট আর ইমোর কল্যাণে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে মন ভরে কথা বলার সুযোগ পান তারা।
খামারে উৎপন্ন শাক-সবজি স্থানীয় শহরে নিয়ে পাইকারি দামে বেচতে হয়। ট্রাক নিয়ে পাইকারও আসে খামারে। বাংলাদেশি পাইকারও রয়েছেন। বিভিন্ন খামার থেকে শাক-সবজি কিনে বড় শহর জেদ্দা, মক্কা বা রিয়াদে সরবরাহ করেন তিনি। ভালো লাভ থাকে, আবার লোকসানও হয় মাঝে মধ্যে।
প্রবাস জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে অনেকে বেড়াতে যান এসব কৃষি-খামারে। অনেকে বন্ধু-বান্ধবসহ সপরিবারে বনভোজনের আয়োজন করেন। তারা খেতের আলপথে হেঁটে, মরিচ-শিম-করল্লা আর ঝুলে থাকা লাউয়ের গায়ে আলতো পরশ বুলিয়ে, গাছ থেকে কাঁচা আম পেড়ে খাওয়ার শৈশব-স্মৃতি তাড়া করে অনেককে।

আব্দুল মতলব একসময় খামার শ্রমিক হিসেবে প্রবাসে কাজ করে আজ নিজেই উদ্যোক্তা হিসেবে খামার পরিচালনা করছেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল সৌদি আরবে কৃষিখামার লাভজনক ব্যবসা।
বাংলাদেশের লাখো মানুষ মরুর দেশ সৌদি আরবে কর্মরত। আর তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মরুর বুকেও সবুজ ফসল ফলাচ্ছেন প্রবাসী ওই বাংলাদেশিরা। প্রবাসের মাটিতে বাংলাদেশিদের কৃষি সাফল্য-সুনাম কুঁড়িয়েছে সর্বত্র।
বর্তমানে ৫৭ বছর বয়সী আব্দুল মতলব দেশেও একজন কৃষক ছিলেন। ২৩ বছর বয়সে সৌদি আরবে এসেছিলেন তিনি। এখানেও প্রায় ৩৪ বছর হলো। আব্দুল মতলব তার দেশের কৃষি কাজের অভিজ্ঞতা, নিজস্ব বুদ্ধি ও কৌশলকে কাজে লাগিয়ে আরবের মরুভূমিকে কৃষি খামার করে চলেছেন।

আব্দুল মতলব জানান, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামীণ মানুষের রয়েছে কৃষির প্রতি টান। রয়েছে মাটির প্রতি অন্যরকম মমতা। এই সত্য বারবারই প্রমাণিত হয় পৃথিবীর দেশে দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কৃষি সাফল্যের মধ্য দিয়ে।
অনাবাদি, পতিত, বালি-কাঁকর মেশানো যেমন মাটিই হোক, অথবা আবাদি ভূমির ব্যবস্থা না থাকলেও জৈব উপাদান ব্যবহার করে তাতে ফল, ফুল, সবজি ফলিয়ে দেখিয়ে দিতে পারেন একজন বাংলাদেশি।
চারা রোপণ করার পর থেকে শিম চার মাস, টমেটো ৯০ দিন ও বাকি সবজি ৪৫ দিনের ভেতরে বাজারে বিক্রি করা যায়। এই বাগান থেকে মদিনা, জেদ্দা, রিয়াদসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় সবজি রপ্তানি করা হয়।
মতলব আরও জানান, তার বাগানে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করতেন। অবৈধ প্রবাসীদের সাধারণ ক্ষমায় জেল জরিমানা ছাড়া দেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ায় বেশিরভাগ শ্রমিক দেশে চলে যায়।
অভাব ছিল মতলবের নিত্যসঙ্গী। দুই মেয়ে ও চার ছেলের সংসারে খাবার জোটাতে বাংলাদেশ থেকে ১৯৮৩ সালে কাজের সন্ধানে ওমরাহ ভিসায় এসেছিলেন সৌদি আরবে । পরে ১৯৮৬ সালে নতুন ভিসা কিনে আবার সৌদি আসেন। সংকল্প ছিল তার। মদিনায় কফিলের (নিয়োগকর্তা) কাছে জমি বন্ধক নিয়ে শুরু করেন সবজি চাষ।


গৃহায়ণমন্ত্রীর ফ্রান্স সফর নিয়ে প্রবাসীদের বিভিন্ন আয়োজন


পাচঁদিনের এক সরকারি সফরে ফ্রান্স যাচ্ছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন। তার এই আগমন উপলক্ষে ফ্রান্সে বসবাসরত বৃহত্তর চট্টগ্রাম প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও আনন্দ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সফরকালে মন্ত্রী বাংলাদেশি বৌদ্ধদের প্রতিষ্ঠিত কুশালায়ন বুড্ডিষ্ট মেডিটেশন সেন্টারের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দিবেন। এছাড়া চট্টগ্রাম প্রবাসীদের উদ্যোগে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় অংশ নেবেন মন্ত্রী। 
 
বাংলাদেশ-ফ্রান্স চেম্বার অব কর্মাসের মেম্বার, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মানিক মো. বাবলু জানান, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিয়ার মোশাররফ হোসেনেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর উদ্যোগে গণসংবর্ধনা দেয়া হবে। এতে ফ্রান্সস্থ চট্টগ্রামের অধিবাসী ছাড়াও প্রবাসীরা মাননীয় মন্ত্রীকে সম্মান জানাবেন।’ বৃহত্তর চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া প্রবাসী সাংবাদিক দেবেশ বড়ুয়া বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রীর আগমনে চট্টগ্রামবাসীদের মধ্যে এক প্রকার উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আশা করি সবগুলো অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে’।
 
এসময় তারা ফ্রান্সে বসবাসরত বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীসহ সকল প্রবাসীদের বিশেষ আমন্ত্রণ জানান এবং সব ধরনের সহযোগিতা করার অনুরোধ করেন।

ব্রিসবেনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও গণহত্যা বিষয়ক মতবিনিময়


এই কিছুদিন আগের ঘটনা | এক বাসায় দাওয়াত খেতে গেলাম | বিদেশে বসবাসরত কয়েকজন বাঙালি একসঙ্গে হলে যা হয়—অবধারিতভাবে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্রিকেট নিয়ে কথা শুরু হলো | একজনকে দেখলাম খুব বড় গলায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা বলছেন | তিনি বারবার বলছেন, ‘মুজিব’ | এমন নয় যে এইভাবে নামটা বলা যাবে না। তবে তার বলার মাঝে কেমন যেন একটা ঘৃণা ও অবজ্ঞা মেশানো ছিল | কথার এক প্রসঙ্গে তিনি বলে যাচ্ছিলেন—খন্দকার মোশতাক বাংলাদেশের একজন সিংহ পুরুষ | মুজিবকে মেরে সে বাঘের বাচ্চার কাজ করেছে |
কয়েক দিন আগের আরেক ঘটনা | বাংলাদেশের এক ছাত্র অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করতে এসেছে। সে তার সহপাঠী আরেক বাংলাদেশি ছাত্রকে জিজ্ঞেস করেছে—তোমার দেশে একাত্তরের যুদ্ধে কতজন মারা গেছে? (খেয়াল করবেন, সে বলেছে তোমার দেশে। তার মানে বাংলাদেশ নামক দেশটা তার না) উত্তরের অপেক্ষা না করে সে তার মোবাইলের ক্যালকুলেটরে হিসাব করতে করতে বলল, ধরো, তোমাদের মুজিবের কথামতো ৩০ লাখ মারা গেল, তাহলে ৩০ লাখকে ৬৪ দিয়ে ভাগ করো, প্রতি জেলায় কতজন মারা গেছে তার একটা সংখ্যা তুমি পাবে। এখন এ সংখ্যাকে প্রথমে উপজেলা তারপর গ্রামের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে প্রতি গ্রামে কতজন মারা গেছে তার আনুমানিক একটা সংখ্যা পাবে। এভাবে তুমি ২ লাখ রেপের সংখ্যা থেকেও প্রতি গ্রামে রেপের সংখ্যাটা বের করতে পারবে। এখন তুমি কি প্রমাণ দিতে পারবে, তোমার গ্রামে এত সংখ্যক মানুষ একাত্তরে মারা গেছে? রেপ হয়েছে?
গত এক যুগের বিদেশ জীবনে এমন ঘটনা প্রায় প্রতিনিয়তই শুনে আসছি | একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধীদের আত্মীয়স্বজন ও তাদের অনুসারীরাতো আছেই | এদের সঙ্গে আরেকটি শ্রেণিও এই অপপ্রচারগুলো খুব সুচারুভাবে করে যাচ্ছেন | এই শ্রেণিটির বেশির ভাগের বয়স ৪৫ থেকে ৫০-এর মধ্যে | ৮০ ও ৯০-এর দশকে এরা বাংলাদেশে বেড়ে উঠেছেন | একসময় এরা বাংলাদেশ সেরা ছাত্রছাত্রী ছিলেন | এসএসসি-এইচএসসিতে তাদের ছবি বাংলাদেশের মূলধারার সবগুলো পত্রপত্রিকাতেই একাধিক বার ছাপানোও হয়েছিল | কোদাল আর ঝুড়ি পাশে রেখে চোখে কালো চশমা সাদা টিশার্ট পড়া এক ছবি দিয়ে বিখ্যাত হওয়া এক প্রেসিডেন্ট এই মেধাবীদের ব্রেনওয়াশ ভালো মতোই করে গিয়েছেন | তিনি তাঁর প্রেসিডেন্সির সময়ে প্রতিটি বোর্ডে মেধাস্থান অধিকারীদের নিয়ে বঙ্গোপসাগরে শিক্ষা ভ্রমণে গিয়েছিলেন | সদ্য কিশোর একটি ছেলে যে কিনা দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর মানুষটির সঙ্গে খেয়েছে, কথা বলেছে, ভাব বিনিময় করেছে, গুরুত্ব পেয়েছে, সেই ছেলেটি পরবর্তী জীবনে কীভাবে এই প্রেসিডেন্টের নীতির বিরোধিতা করবে? ইদানীং এদের অপপ্রচারের একটি ট্রেন্ড আমি খেয়াল করেছি | এরা প্রথমে সরকারের বিভিন্ন কাজের বিরোধিতা করে | পরবর্তী ধাপে এরা বঙ্গবন্ধুকে বিরোধিতা করে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে, তাঁর পরিবার নিয়ে, রাজনৈতিক জীবন নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ায় | সেই বিরোধিতার ধারাবাহিকতায় এরা এক সময় বাংলাদেশেরও বিরোধিতা শুরু করে | দেশের মুক্তিযুদ্ধের সকল কৃতিত্বকে খাটো করে দেখে | ইতিহাসকে বিকৃত করে |
ইতিহাস বিকৃতির এই ধারা আজ থেকে নয় | ’৭৫-এর পরবর্তীতে রাজনৈতিক ইঞ্জিনিয়ারিং এত সুকৌশলে করা হয়েছে যে একটি প্রজন্ম স্বাধীনতার বিকৃত ইতিহাসকেই সঠিক ইতিহাস মনে করে | ’৭৫-এর পরে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ওপর এক ফিল্টার বসিয়ে দেওয়া হলো | সে ফিল্টার ভেদ করে যা মিথ্যে তাই রেডিও টেলিভিশন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতো | যা বিভ্রান্তি ছড়াবে তাই ছাড়পত্র পেত |
এই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি ছিল রাজনীতিকে মেধাশূন্য করার আরেক সুকৌশলী পদক্ষেপ | আমরা যখন স্কুল-কলেজে পড়ি তখন শুনেছি রাজনীতি হলো মাস্তানদের কাজ | যারা ক্লাসে শেষ বেঞ্চে বসবে, যারা মারামারি চাঁদাবাজি করবে রাজনীতি তাদের জন্য | বুঝে হোক না বুঝে হোক আমাদের মান্যবর শিক্ষকেরাও এই ধারণাই প্রচার করেছেন | রেডিও টেলিভিশনে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, রাজনীতি ভালো ছেলেমেয়দের জন্য নয় | তারা পত্রিকার পাতায় বড় বড় কলাম লিখেছেন | ভালো ছাত্রছাত্রীরা মুখ বুঝে বই পড়বে। আর বখাটেরা রাজনীতি করবে, অস্ত্র হাতে নেতাদের পেছনে ঘুরবে |
আর তাদের চেষ্টাকেও সমর্থন দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও অভি-নীরুরা সৃষ্ট করেছিল এক নতুন যুগের | গোলাগুলি ছাত্র খুন নিয়মিত ব্যাপার ছিলই | এর ফলস্বরূপ যা হওয়ার তাই হয়েছে | আমাদের রাজনীতি এখন দুর্বৃত্তদের দখলে | আওয়ামী লীগ বা বিএনপি সব দলেই এখন এই দুর্বৃত্তদের পাল্লা ভারী | এদের বেশির ভাগের কাছে দেশের চেয়ে দল বড় | দলের চেয়েও দলের নেতা বড় | দেশ ও আদর্শ এদের কাছে খুব তুচ্ছ ব্যাপার | নিজের হীনস্বার্থের জন্য এরা যেকোনো কাজ করতে পারে |
এইতো কয়েক দিন আগে বরিশালের এক আওয়ামী লীগ নেতা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে ছাপা হয়েছে অভিযোগ এনে এক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে মামলা করে তাঁকে জেল হাজতে ঢুকিয়ে দিয়েছেন | উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিশুদের জন্য একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন | পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তিনি সেখান থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়া দুটি ছবি নিয়ে স্বাধীনতা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়েছেন | একটি শিশু তার মতো করেই বঙ্গবন্ধুকে এঁকেছে | একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে কোথায় তিনি সেটি সমর্থন করবেন, শিশুদের উৎসাহিত করবেন তা না, উল্টো তার অনুভূতিতে আঘাত লেগে গেছে | বঙ্গবন্ধুর ছবি যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো শিশু আঁকতে না পারে তার জন্য একটি পাকা ব্যবস্থা করার চেষ্টা চালিয়েছেন | পত্রিকায় দেখলাম এই নেতা মাত্র পাঁচ বছর আগেও আওয়ামী লীগ করতেন না | আমি নিশ্চিত আরও খোঁজ নিয়ে জানা যাবে সে হয়তো আওয়ামী লিগের একটি মূল নীতিও জানে না | এই রকম অনুভূতিওয়ালা নব্য আওয়ামী লীগাররাও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ইচ্ছেমতো বিকৃত করে চলছে |
এর পরেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ১৯৯০ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম মাত্র কয়েক হাজার জনতা নিয়ে যে ডাক দিয়ে গিয়েছিলেন, ২০১৩ সালে এসে সেটি লাখো জনতার ডাকে রূপ নিয়েছিল | সেদিন ঢাকার রাজপথে নেমে আসা লাখো জনতার মাঝে বেশির ভাগেই ছিল এই প্রজন্মের ছেলেমেয়ে | গোলাম আযম, নিজামী, সাকা চৌধুরী, কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি উঠেছে এদের অন্তর থেকে | শুধু ঢাকায় নয়, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণজাগরণ মঞ্চ হয়েছে | যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এই দাবি শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে যেখানেই বাংলাদেশি আছে সেখানেই এই দাবি উঠেছে | কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম, পাকিস্তানের কিছু তরুণ দাবি তুলেছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরারা একাত্তরে যে নারকীয় গণহত্যা চালিয়েছিল তার জন্য তাদের সরকারকে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এ দাবিটি আমাদের উঠতে-বসতে করা দরকার। সব আন্তর্জাতিক ফোরামে এ দাবিটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব সময় তোলা উচিত। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের কীর্তিকলাপের বর্ণনাও দেওয়া উচিত। এগুলো যত বেশি বেশি করা হবে, ততই বিশ্ব জানবে পাকিস্তান ১৯৭১ সালে কি করেছিল। ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানকে এটা বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে।
দুইগত ৯ থেকে ১৩ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডে হয়ে গেল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারসের ১৩তম সম্মেলন। ‘গণহত্যা প্রতিরোধ ও ন্যায়বিচার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে আয়োজিত এই সম্মেলনে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আইনজ্ঞ ও গবেষকদের ভেতরে অন্যতম ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্র্যাটেজি ফোরামের (আইসিএসএফ) প্রতিনিধিত্বকারী চারজন বাংলাদেশি আইন গবেষক—ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন, ড. রায়হান রশিদ, ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ ও এম সানজিব হোসেন। আইসিএসএফ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল ব্লগ ও সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে একঝাঁক মেধাবী শিক্ষক, গবেষক ও আইনজ্ঞদের নিয়ে গড়া একটি স্বাধীন বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক। যাদের মূল লক্ষ্য হলো, বিভিন্ন গণহত্যা, আন্তর্জাতিক অপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কিংবা যুদ্ধাপরাধের বিচার ও প্রতিরোধে শক্তভাবে কাজ করা। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংগঠন হলেও, আইসিএসএফ আমদের কাছে পরিচিত ২০০৯ সাল থেকে। যখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া ভয়ংকর গণহত্যা আর নির্যাতনের জন্য দায়ী অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে দিন রাত সংগঠনটি মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল জোগাড় করেছেন। অনলাইনে সোচ্চার থেকেছেন রাজাকারদের মনগড়া ইতিহাসকে প্রতিহত করতে। পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা যখনই বিভিন্ন সম্মেলন, মিডিয়া কিংবা ভাড়া করা লবিস্ট নিয়ে এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছ, আইসিএসএফ বিভিন্ন মাধ্যমে, তথ্য ও প্রমাণসহ তাদের কড়া জবাব দিয়েছে।
কনফারেন্স সুবাদে এই চারজন সমৃদ্ধ ব্যক্তি ব্রিসবেনে আসলেও তারা এখানকার প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ব্রিসবেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন, ব্রিসবেন বাংলা রেডিও ও ব্রিসবেন বাংলা স্কুল যৌথভাবে খুব কম সময়ের ভেতরেই তাঁদের নিয়ে ব্রিসবেনের এলেন গ্রোভ ইউনিটিং চার্চে গত ১৪ জুলাই সন্ধ্যায় একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে | এই আয়োজনের পেছনে ব্রিসবেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শামিমের ভূমিকা সত্যি প্রশংসার দাবিদার |
ঘরোয়া একটা পরিবেশে সেখানে জড়ো হন সব বয়সের, আর শ্রেণি পেশার প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগত অতিথিরা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্র্যাটেজি ফোরামে কাজ করতে গিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টিভঙ্গির কথা, কীভাবে এই কাজে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সম্পৃক্ত হতে পারি, তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।
ব্রিসবেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিকাশ শিকদার ও ব্রিসবেন বাংলা স্কুলের সভাপতি মাহি মোর্শেদ অনুর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই একটা গভীর নীরবতা নেমে আসে। ব্রিসবেনে আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্ম, যারা বেড়ে উঠেছে অন্য এক আলো বাতাসে, সেই সব নবীনদের চোখের কোণেও জল এসে পড়ে। কারণটা ছিল সংগত। শুরুতেই আইসিএসএফ থেকে নির্মিত ‘1971 Genocide: A Creed for Justice’ নামে একটা ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। মূল্যবান রেফারেন্স আর গ্রহণযোগ্য উপাত্তসহ প্রদর্শিত এই ডকুমেন্টারি দেখে কান্না চেপে রাখা দুঃসাধ্য কাজ ছিল। ডকুমেন্টারিতে এন্ডি রো-এর ইংরেজি ধারাভাষ্যের কারণটাও ছিল স্পষ্ট—আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের জেনোসাইডকে জানান দেওয়ার জন্য।
অতিথি ড. রায়হান রশিদও এ বিষয়টির ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, আমার যারা ৩০ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের মূল্যে পাওয়া স্বাধীনতাকে বুকে লালন করি, তাদের ভেতরে একটা আবেগ কাজ করে। তাই আমরা এই যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে সোচ্চার, কিন্তু নতুন প্রজন্ম কিংবা আজ থেকে এক শ বছর পরে যারা পৃথিবীতে আসবে তাদের ভেতর এই অনুভূতিটা নাও থাকতে পারে। তিনি মনে করিয়ে দেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা তথ্য বিভ্রাট ও বিকৃতির মাধ্যমে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কাজে তৎপর। গুগলে খুঁজলেই অনেক ভুল তথ্য আমাদের সামনে চলে আসে। এর পেছনে কাজ করছে বাংলাদেশ বিরোধীদের কোটি কোটি টাঁকার কু-বিনিয়োগ। তাদের নিয়োজিত বড় বড় সব পিআর আর লবিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলো উঠে পড়ে লেগেছে এই বিচারকে বন্ধ করতে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংগঠন, ইকোনমিস্টের মতো পত্রিকাকে তারা প্রভাবিত করে ফেলেছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো আমাদের পরের প্রজন্মগুলো একসময় প্রভাবিত হয়ে সঠিক ইতিহাস নিয়ে সংশয়ে থাকবে।
ড. রশিদের মতে, এই ঘৃণ্য শুক্তিকে শুধুমাত্র আবেগ দিয়ে মোকাবিলা করলে চলবে না। গবেষণা আর উপাত্ত প্রসূত দলিল নিয়ে জবাব দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে অনলাইন এবং অফলাইনকে সঠিক প্রামাণ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করতে হবে যাতে বঙ্গবন্ধুর এই বাংলায় আজ থেকে হাজার বছর পরেও কেউ বিভ্রান্ত না হয়।

ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন একজন প্রথিতযশা আইন গবেষক। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে পারাটা ছিল আমাদের জন্য একটা বড় পাওয়া। মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুটতরাজ, ধর্মান্তরের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিতে আহমেদ জিয়াউদ্দিনের গবেষণা ও নির্দেশনার একটা বড় ভূমিকা আছে। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, দেশে বিদেশে রাজাকারদের বংশধরদের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা, উপায়ন্তরে বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে, কেন ‘জেনোসাইড ডিনাইল ল’-এর জন্য কাজ করছেন না, যেখানে জার্মানির মতো রাষ্ট্রে এই আইন রয়েছে?
ব্যাপারটার একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পেলাম। তাঁর মতে, জার্মানির স্কুল থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই ইতিহাস সম্পর্কে একটা পোক্ত ধারণা দিয়ে দেওয়া হয়। তাদের ভেতর খুব কম মানুষই আছে যারা ভুল ইতিহাস দিয়ে অন্যকে বিভ্রান্ত করে। সেখানকার শতভাগ মানুষের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের একটা কাছে সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দিয়েই এই আইনটি কার্যকর করা হয়েছে। অন্যদিকে, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশে এখনো সরকার বদলে গেলে ইতিহাসের বই পরিবর্তন হয়, ধর্মকে পুঁজি করে ভুল দীক্ষা গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের আধুনিক ছেলেমেয়েটির মাথাতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই অবস্থাতে এ রকম কোনো আইন পাস করলে তার অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তিনি আরও যোগ করেন, এ ধরনের আইন অবশ্যই দরকার, তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে সবার কাছে বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দিতে হবে, মৌলিক বিষয়গুলোকে জানাতে হবে, ধর্মভিত্তিক চরমপন্থী রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
দলের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ, কীভাবে এই ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা যায় সেটা জানালেন। তিনি অনেক আশার কথা শোনালেন, কীভাবে বাংলাদেশের স্কুলগুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম যুক্ত হচ্ছে, সেখানে মাসে একটা করে মুক্তিযুদ্ধের ছবি প্রদর্শন হচ্ছে, খোলামেলা আলোচনার একপর্যায়ে ব্যারিস্টার ফরহাদের আরেকটি কথা বেশ মনে ধরল। তিনি জানালেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কি হলিউডের কোনো মুভি বানানো যায় না? যার মাধ্যমে বাংলাদেশের পাকিস্তানি গণহত্যার কথা পৌঁছে যাবে পৃথিবীর আনাচকানাচে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে স্বাধীনতার মাত্র ৪৭ বছরে এসেই আমরা আজ রাজাকারদের বিচার নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন পাকিস্তান ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদরদের গণহত্যা ও নির্যাতনের কলঙ্কজনক অধ্যায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে নামীদামি মিডিয়া, সংগঠন আর তথাকথিত অনেক উন্নত অনেক দেশ। কিন্তু আমাদের বসে থাকলে চলবে না। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তার সহায়ক বাহিনীসমূহ বাংলাদেশের জনসাধারণের যে গণহত্যা চালিয়েছে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আজকের প্রেক্ষাপটে অনেক জরুরি। এই স্বীকৃতি লাখো আত্মত্যাগীর আত্মাকেই শুধু শান্তি দেবে না, ভবিষ্যতে এমন নৃশংসতার পুনরাবৃত্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের বিশ্বব্যাপী কর্মসূচিকে আরও জোরদার করার জন্য আইসিএসএফ যে কাজ শুরু করেছে সেটি এগিয়ে নিতে এখনো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি আছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্তের স্বার্থে ভারতের কাছে মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত যে সকল সামরিক দলিল ও নথিপত্র রয়েছে তা অবমুক্ত করে বাংলাদেশে আনতে হবে | ১৯৭১ সালে সংঘটিত নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ’ হিসেবে স্বীকৃতির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে | শুধু তাই নয় প্রবাসী বাঙালিরা যার যার অবস্থান থেকে এই বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সেখানকার পার্লামেন্টে তুলতে পারেন |
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর সংরক্ষণের পাশাপাশি, বিভিন্ন বুদ্ধিভিত্তিক উন্নয়ন যেমন মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত সকল দলিল সংরক্ষণ, ডিজিটাইজ, ও বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। মনের ভেতর অনেক শঙ্কা থাকলেও ড. জিয়াউদ্দিন, ড. রশিদ কিংবা ব্যারিস্টার ফরহাদের কথাগুলো আমাদের আশাবাদী করে। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে তখন প্রায় রাত প্রায় ১১টা। মনের ভেতর অন্যরকম এক তাগিদ অনুভব করি, না! বাড়ি ফেরার তাগিদ নয় | দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ | যাদের রক্তে রঞ্জিত আমাদের এই লাল সবুজের পতাকা, তাদেরকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দেওয়ার তাগিদ| আগত প্রজন্মকে বাংলাদেশ সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস দেওয়ার তাগিদ...।
*ড. মুহম্মদ জে এ সিদ্দিকী: বিজ্ঞানী ও শিক্ষক, গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া |
*নাজমুল ইসলাম, পিএইচডি স্কলার, গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া |





Fun Video